জেনিফার হ্যালার, ক্যালিফোর্নিয়াবাসী এক মহিলা নিলেন পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিনটি। এটা ছিল এ বছরের ১৬ মার্চ। শুরু হলো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা।
এই ভ্যাকসিন mRNA 1273-আবিষ্কারের কৃতিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না বায়ো কোম্পানি এবং এই দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা (NIH) যৌথভাবে। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি দেওয়া হলো ১৭ এপ্রিল জেনিফারকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন প্রতিরোধ করবে SARS-COV-2 ভাইরাসকে যা কোভিড-১৯ রোগের কারণ।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটি SARS-COV-2 পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনের পরীক্ষা শুরু করে মানুষের শরীরে। যখনই জানা গেল করোনাভাইরাস প্যানডেমিক বা মহামারির আকার নিতে যাচ্ছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছে কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরির বিশ্বময় প্রতিযোগিতা। এই মুহূর্তে ১৪০টিরও বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
ভ্যাকসিন কেন দরকার?
বর্তমানের লকডাউন অবস্থা থেকে ভয়শূন্যভাবে মুক্তি পেতে হলে দরকার একটি কার্যকরী ও নিরাপদ ভ্যাকসিন। এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। এই ভাইরাস (SARS-CoV-2) এত বেশি সংক্রামক যে মানবসভ্যতা হুমকির সম্মুখীন। অর্থনৈতিক ক্ষতি, মানুষের মৃত্যু ও ভোগান্তি থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র অব্যর্থ অস্ত্র হবে একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন। কেবল তখনই আমরা ফিরে যেতে পারব স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। সুখবর হলো, এ ব্যাপারে অর্থাৎ ভ্যাকসিন তৈরিতে আমরা অনেকখানি এগিয়ে গেছি।
ভ্যাকসিন তৈরিতে কেন দেরি হচ্ছে?
ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। ভ্যাকসিন কার্যকরী এবং তা ব্যবহারের জন্য নিরাপদ, এই দুটি শর্তই নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই ভ্যাকসিনটি দেওয়া হবে লাখ লাখ সুস্থ মানুষকে। এখানে ভুলের কোনো সুযোগ নেই। ভ্যাকসিনের অতীত ইতিহাস আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে।
ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা কতটুকু?
ধারণা করা হচ্ছে, একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন শুধু সময়ের ব্যাপার। বিশ্বের সম্পদশালী সব দেশের আর্থিক সহযোগিতায় বিশ্বের বরেণ্য বিজ্ঞানীরা এবং খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলো নিয়োজিত হয়েছে একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য। আমেরিকার প্রথম সারির বায়োমেডিকেল কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন এক বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘোষণা করেছে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরিতে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ভ্যাকসিন তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন তৈরি সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, measles ভ্যাকসিন করা হয়েছে জীবন্ত ভাইরাসকে অকার্যকর (attenuation) করে। পোলিও ভ্যাকসিন করা হয়েছে ভাইরাসকে মেরে সম্পূর্ণ ভাইরাসটিকে ব্যবহার করে। অন্যদিকে কলেরা ও টিটেনাস ভ্যাকসিন করা হয়েছে টক্সিনের অংশবিশেষ নিয়ে। আর আধুনিক টেকনোলজি চেষ্টা করছে জীবাণুর বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য অংশ, যেমন জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রোটিন, যা ভাইরাসকে সংক্রামক করতে সাহায্য করে (যেমন SARS-CoV-2-এর ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন) ব্যবহার করে, যার ফলে ভ্যাকসিন নিরাপদ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
তবে কোনো রোগের জন্য কোনো পদ্ধতি কার্যকর হবে, তা পরীক্ষা সাপেক্ষ। সময়ের ব্যাপার সেখানেই।
সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দুটি ভ্যাকসিন, যা এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত, তা হলো mRNA-1273 ও Oxford Covid-19 ভ্যাকসিন (ChAdox1)।
mRNA-1273 এই ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে মডার্না বায়ো কোম্পানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে। বৈজ্ঞানিকভাবে উন্নত মানের টেকনোলজি প্রয়োগ করে এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের (SARS-CoV-2) জেনেটিক পদার্থ, যা অপরিহার্য এ ভাইরাসের বেঁচে থাকার জন্য, সেটাকে পৃথক করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিনে। এর কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে যখন মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। মার্স ভাইরাস ও কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাস (SARS-CoV-2) নিকট আত্মীয়, তাই সুবিধা হচ্ছে আগের কাজের ভিত্তিতে কোভিড-১৯ রোগের জন্য এই ভ্যাকসিন দ্রুত তৈরি করা। আগেই বলেছি, এটার পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে মানুষের শরীরে। শিগগিরই জানা যাবে এই ভ্যাকসিনের সার্থকতা। see more
Emoticon